প্রাইভেট শিক্ষকের হুমকিতে ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ



নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, ২৪ জুন।
প্রাইভেট শিক্ষকের হুমকি ও ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে কেশবপুরের বরনডালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রী। শিক্ষকের নানা রকম হুমকির ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে ওই ছাত্রীর। এমনকি সে চলমান অর্ধবাষিকী পরিক্ষাও দিতে পারছে না। প্রাইভেট শিক্ষক রিপনের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে ওই ছাত্রীর ছবি ফটোসপের মাধ্যমে তার ছরিব সাথে জুড়ে দিয়ে দুটি ভুয়া ফেসবুক আইডির মাধ্যমে প্রচার করেছে। বিদ্যালয় ও ছাত্রীর পিতা কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল হয়নি। নির্বাহী অফিসার ঘটনা তদন্তের জন্য কেশবপুর থানা পুলিশের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ঘটনার দশদিন পার হলেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি।
পারিবারিক ও লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার বরনডালী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে এস এস জি বরনডালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। একই গ্রামের রোকুনুজ্জামান রিপন তাকে প্রাইভেট পড়াত। পড়ানোর সুযোগে শিক্ষক রিপন কৌশলে ওই ছাত্রীর ছবি তার মোবাইলে তুলে রাখে। রিপন ওই ছাত্রীকে বার বার বিয়ের প্রস্তাব দিতে দিয়ে আসছিল। তার প্রস্তাব বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এক পর্যায়ে শিক্ষক রিপনের এই ঘটনা ওই ছাত্রী তার বাবা-মাকে জানায়। এরপর পিতা-মাতা রিপনের কাছে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করে দেন এবং তাকে অন্য শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াতে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রিপন ওই ছাত্রীর মায়ের মোবাইল ফোনে একের পর এক নানা রকম হুমকীর ম্যাসেজ পাঠায়। রিপনের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে তার বাবা-মাকেও মিথ্যা অপবাদ দেয়াসহ মেয়েকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে না দেওয়ার হুমকী দেয়। শিক্ষক রিপন ওই ছাত্রীর ছবির সাথে তার ছবি জুড়ে ফটোসপের মাধ্যমে দুই জনের মুখমন্ডল পাশাপাশি বসিয়ে “সনিয়া খাতুন ও অভিমানী মেয়ে” নামে দুটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ছবি ছড়িয়ে দেয়।
এস এস জি বরনডালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিপংকর দাস জানান, ১৫ জুন স্কুল থেকে বাড়ী যাওয়ার পথে রিপন ওই ছাত্রীকে আটকে উত্তাক্ত করে। স্থানীয়রা মেয়েটিকে রিপনের কবল থেকে উদ্ধার করেন। সাথে সাথে আমি বিষয়টি বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানায়। ছাত্রীকে তার অভিভাবকের সাথে ভালুকঘর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্সের কাছেও পাঠানো হয়। স্কুলের সহকারী শিক্ষক গপিনাথ চৌধুরী ও ছাত্রীর পিতার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করিয়েছি। শনিবারে পরিক্ষায় অংশগ্রহন না করায় আমি ছাত্রীর পিতার সাথে কথা বলে পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে বলেছি। সোমবার সকালে ওই ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে তাদের কাউকে পায়নি।
ছাত্রীর পিতা সিরাজুল মোল্যা জানান, রিপোন ১৫ জুল সকালে স্কুল থেকে ড্রেজ পরিবর্তন করতে বাড়ি আসার সময় তার মেয়েকে রিপন রাস্তায় ধরে অপমান করে। এর আগে গত ৬ জুন সরসকাটি ব্রীজের ওপর গাড়ি থেকে নামিয়ে আমার মেয়েকে লাঞ্চিত করে। ফেসবুকে আমার মেয়েকে নিয়ে বাজে প্রচার করেছে। রিপন ও তার আপনজন সকলের কাছে বার বার অনুরোধ করেছি আমার মেয়ের সাথে এসব না করতে। ১৯ জুন বুধবার বরনডালী বাজারে রিপনের পিতা রবিউল ইসলামের নিকট তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি। সেখানে রিপনের পিতা রবিউল ইসলাম আমার মেয়েকে লাঞ্চিত ও মারপিট করে। রিপন জামাতের ছত্রছায়ায় আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের হুমকী দিচ্ছে। অপমানে আমার মেয়ে একদিন আত্নহত্যার চেষ্টায় ঘুমের বড়ি খেয়েছে। মেয়েকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা হচ্ছে। যেকোন মূহুর্তে রিপন ও তার বাহিনী আমার মেয়েকে অপহরন করতে পারে। তাদের ভয়ে মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করে গত ১০ দিনেও কোল প্রতিকার পেলাম না। শনিবার থেকে তার অর্ধবার্ষিকী পরিক্ষা শুরু হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মেয়ে পরিক্ষাও দিতে পারলো না। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবার কথা। হয়তো সেটাও দেওয়া সম্ভব হবে না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমাকে কেউ জানাননি। তবে আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে শুনিছি। ওই ছাত্রী দীর্ঘদিন স্কুলে আসে না। গত শনিবারে ওই ছাত্রী পরিক্ষায়ও অংশগ্রহন করেনি। যেহেতু আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি সে কারনে ওই ছাত্রীর বিষয়ে আমি কোন ভুমিকা নিতে পারিনা।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান জানান, এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি, সাথে সাথে বিষয়টি তদন্তের জন্য কেশবপুর থানার ওসিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। ওসি ছুটিতে থাকায় তারা এখনো কোন তদন্ত রিপোর্ট দেয়নি। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কেশবপুর থানার ওসি মোঃ শাহীন জানান, রিপন পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
কবির হোসেন
কেশবপুর।
০১৭১১-২৫০৩৫৬