কেশবপুরে হাবিবুল্লাহ নামে এক কওমী মাদ্রাসার মোহতামেম একাই নিয়ন্ত্রন করে আসছে ট্রাষ্ট সম্পত্তি। তার বিরুদ্ধে ট্রাষ্ট সম্পত্তি ও প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ট্রাষ্ট সম্পত্তি থেকে বছরে ১০/১২লক্ষ টাকা আয় হলেও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ২২/২৩মাস বেতন বাকীর খবরে হতবাক সুরা সদস্যসহ এলাকাবাসি। তাদের প্রশ্ন ট্রাষ্ট সম্পতির টাকা কোথায় লোপাট হচ্ছে?
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে সত্যনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার ফতেপুর গ্রামের আলহাজ্ব শওকাত আলী খাঁ ও তার স্ত্রী রওশনারা খাতুন ২০১১ সালে ফতেপুর অহেদুল উলুম নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেন।
প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই আলহাজ্ব শওকাত আলী খাঁ সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারী তিনি প্রথমে ৩৫ নং ধর্মপুর মৌজার তার জমি থেকে উক্ত মাদ্রসার নামে ৩ একর ৬০ শতক জমি মাদ্রাসা কল্যান ট্রাষ্ট নামে দলিল করেন।
পরবর্তিতে একই সালের ১৫ ডিস্মের ৫ একর ০৯ শতক জমি একই কায়দায় ট্রাষ্ট দলিল করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে কেশবপুর শহরের পশু হাসপাতালের সামনে রওশন মঞ্জিলসহ আরো ৪ টি দলিলসহ সর্বমোট ৬টি ট্রাষ্ট দলিলের মাধ্যমে অত্র মাদ্রাসা কল্যান ট্রাষ্টের নামে প্রায় ১২ একর অর্থাৎ প্রায় ৩০ বিঘা জমি দান করেন। ২০১৪ সালের ২ জুলাই শওকাত আলী খাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনিই মাদ্রসার সকল কার্য্যক্রম গঠিত সূরা সদস্যদের পরামশ্য অনুযায়ী পরিচালিত করতেন।
তার মৃত্যুর পর মনিরামপুর উপজেলার মদানিনগর কওমী মাদ্রসার প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি ওয়াক্কাস আলীকে সভাপতি ও মাদ্রসা মুহতামেম মাওলানা মুফতি হাবিবুল্লাহকে সেক্রেটারী করে মোট ১৯ সদস্য বিশিষ্ট মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়।
সূরা সদস্য ও বিভিন্ন তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী মাদ্রাসা নামীয় ট্রাষ্ট সম্পত্তি পরিচালনার জন্য ট্রাষ্ট বোর্ড বা ট্রাষ্ট কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও এখানে এই ধরনের কোন কমিটি নেই এবং ইসলামী ব্যাংক, কেশবপুর শাখায় ঐ মাদ্রাসার নামে যে ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে তাতে ট্রাষ্ট জমির মালিকের পরিবারের কারো নাম নেই।
সূরা সদস্যের এক ব্যক্তি জানান, প্রতি বছর এই ট্রাষ্ট সম্পত্তির মধ্যে কেশবপুর রওশনারা মঞ্জিল থেকে ৬ লক্ষসহ প্রতিবছর প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা আয় হয়ে থাকে। তাছাড়া রওশন মঞ্জিল থেকে প্রতিষ্ঠানের মোহতামেম এ্যাডভান্স হিসেবে আরো ৪ লক্ষ টাকা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে গ্রহন করেছে।
সূরা কমিটির অপর সদস্য বলেন, মাদ্রাসা প্রধান মুফতি হাবিবুল্লাহ নিয়মিত মাদ্রাসায় আসেন না এবং বিভিন্ন অজুহাতে মাদ্রসা চলাকালিন সময়ে বাইরে অবস্থান করে থাকেন। ট্রাষ্ট দলিলে ট্রাষ্টের টাকা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন- ভাতার কাজে খরচ না করার কথা উল্লেখ থাকলেও মোহতামেম সেটি তোয়াক্কা না করে এই টাকা থেকে প্রতিমাসে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন।
দারুল উলুম দেউবন্দ ও বেফাকুল মাদারাসীল আরাবিয়া (কওমী মাদ্রাসা) বোর্ডের নীতিমালা না মেনে নিজের মত করে মাদ্রাসা পরিচালিত করে থাকেন। ট্রাষ্ট কমিটি গঠন ও ব্যাংক একাউন্টে ট্রাষ্ট সম্পত্তির পরিবারের নাম থাকলে টাকা তছরুফে বাঁধাগ্রস্থ হবে জেনেই প্রতিষ্ঠান প্রধান সু-কৌশলে তার নামে একাউন্ট করেছে।
মাদ্রাসার হিসাবরক্ষন বিভাগের শিক্ষক মাওলানা খলিলুর রহমানের কাছে বার্ষরিক হিসাবের খাতা দেখতে চাওয়া হলে তিনি প্রথমে রাজি হলেও পরবর্তিতে মোহতামেম এর চাপের মুখে এই প্রতিবেদককে হিসাবের খাতা না দেখিয়ে কৌশলে এড়িয়ে যান।
ট্রাষ্ট দলিল দাতা ও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের এক সদস্য বলেন, মাদ্রাসা প্রধান হাবিবুল্লাহ অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত করে আসছেন। তাছাড়া প্রতিবছর ট্রাষ্ট সম্পত্তি থেকে ১০/১২ লাখ টাকা ছাড়াও মৌসুমের ধানসহ বিভিন্ন আদায় ও মাদ্রাসার নামে অনুদানের মোটা অংকের টাকা আয় হলেও প্রতি বছর হিসাবের সময় তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা দেনা দেখান। সঠিকভাবে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে ট্রাষ্ট সম্পত্তির অর্থ লোপাটের আসল রহস্য।
এ ব্যাপারে ফতেপুর অহেদুল উলুম মাদরাসার মোহতামেম মাওলানা মুফতি হাবিবুল্লাহ সাথে কথা হলে তিনি ট্রাষ্ট সম্পত্তির জন্য আলাদা কোন ট্রাষ্ট কমিটি ও ব্যাংক একাউন্টে ট্রাষ্ট দলিল দাতা পরিবারের কোন সদস্য না থাকার কথা শিকার করে বলেন, বর্তমানে তিনিসহ মাদ্রসার ৩ শাখায় (নূরানী,হেফজ ও জামাত) ৮ জন শিক্ষক ও প্রায় ১শ ৫০ জনের মত শিক্ষার্থী রয়েছে।
বার্ষরিক ধান কালেকশন ছাড়া মাদ্রসা থেকে কোন আদায় করা হয় না। তাছাড়া এত বড় মাদ্রাসা পরিচালনা করতে গেলে তো একটু-আকটু ত্রুটি বিচ্যুতি হওয়াটা স্বাভাবিক। ভবিষ্যতে এটি সুদরিয়ে নিয়ে মাদ্রসাটি সঠিকভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করব। ট্রাষ্ট সম্পত্তি থেকে প্রায় ১০ লাখের মত টাকা বছরে আয় হয় বলে তিনি জানান এবং প্রতি মাসে এই টাকা থেকে মরহুম শওকাত আলী খাঁর স্ত্রীকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মুফতি ওয়াক্কাস বলেন, সুরা সদস্য ও ট্রাষ্ট দাতা পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ মোতাবেক চলতে হবে মাদ্রসা। এর ব্যাত্ত্বয় ঘটলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া মাদ্রসা সংক্রান্ত অন্য কোন সমস্যা থাকলে পরবর্তি মিটিং-এ সেটি সমাধান করা হবে। - এম এ রহমান।